ব্যক্তিত্ব

শুধুই উপন্যাস নয়, ডমিনিক লাপিয়েরের কলকাতা-যোগ ছিল আরও গভীরে

প্রগত ভৌমিক Dec 7, 2022 at 5:42 am ব্যক্তিত্ব

‘সিটি অফ জয়’। তিলোত্তমা কলকাতার এই অতিপরিচিত অভিধা ধার করা হয়েছিল তাঁরই লেখা উপন্যাসের শিরোনাম থেকে। তিনি ফরাসি সাহিত্যিক ডমিনিক লাপিয়ের (Dominique Lapierre)। গত ৫ ডিসেম্বর, ৯১ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ভারতপ্রেমিক এই বিশ্ববরেণ্য লেখক। বয়সজনিত কারণেই স্বাভাবিক মৃত্যু, সংবাদমাধ্যমকে এমনই জানিয়েছেন লাপিয়েরের স্ত্রী।

১৯৩১ সালে ফ্রান্সের চ্যাটেইলোনে জন্ম লাপিয়েরের। ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম নন-ফিকশন গ্রন্থ ‘ইজ প্যারিস বার্নিং?’। বিষয়বস্তু বিশ্বযুদ্ধকালীন নাৎসি জার্মানির অধিগ্রহণে থাকা প্যারিস। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম সাড়াজাগানো উপন্যাস 'দ্য ফিফথ হর্সম্যান।' সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন নিয়ে লিখতে ভালবাসতেন। লেখার আগে কঠোর পরিশ্রম করে পর্যবেক্ষণ করতে চাইতেন লেখার বিষয়বস্তু। সেই লক্ষ্যেই কলকাতা নিয়ে লিখবেন বলে কলকাতায় সময় কাটাতে আসেন  লাপিয়ের। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত 'দ্য সিটি অব জয়' গোটা বিশ্বের দরবারে পরিচিতি এনে দেয় তাঁকে। কলকাতার আনন্দনগর নামে একটি বস্তিকে কেন্দ্র করে তিনি বুনেছিলেন উপন্যাসের গল্প।এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপটে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ইতিহাস। দৈনিক নিপীড়ন, নির্যাতন, শোষণ, অস্পৃশ্যতা এবং বৈষম্যের কাহিনি। মূলত দেকান হয়েছে রিকশাচালকদের জীবন।  ১৯৯২ সালে পরিচালক রোলান্ড জফ এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। অভিনয় করেছিলেন প্যাট্রিক সোয়েজ, ওম পুরী, শাবানা আজমি, অঞ্জন দত্ত প্রমুখ। অবশ্য ফিল্মটি মুক্তি পাবার পর বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। বলা হয়েছিল, কলকাতার দারিদ্র্যলাঞ্ছিত কদর্য জীবনকেই শুধু চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন লাপিয়ের। আদতে লাপিয়ের কিন্তু কলকাতার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের প্রতি গভীর সহানুভূতি অনুভব করতেন। কলকাতা নগরীকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন এই ফরাসি লেখক। ১৯৮১ সালে তাই তৈরি করেন 'City of Joy Aid' নামে এক সমাজসেবী সংগঠন। দুঃস্থদের জন্য ক্লিনিক, স্কুল, পুনর্বাসন কেন্দ্র ইত্যাদি পরিচালনা করে এই সংগঠন। লাপিয়েরের রয়ালটি থেকেই চলে সবকিছু। 

১৯৭৫ সালে বেরোয় ল্যারি কলিন্সের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা 'ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট', যার বিষয়বস্তু ভারতে ব্রিটিশরাজের শেষ কয়েকটা দিন। ১৯৯০ সালে বেরোয় 'বিয়ন্ড লাভ' এবং ১৯৯৯ সালে বেরোয় 'আ থাউজ্যান্ড সান'। সবকটিই তুমুল পাঠকপ্রিয়তা পায়। ২০০১ সালে প্রকাশ পায় ভোপাল গ্যাস-দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা লাপিয়েরের শেষ উপন্যাস ‘ফাইভ পাস্ট মিডনাইট ইন ভোপাল’। এই উপয়নাস লেখার জন্যে ইন্দোর ও ভোপালে দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন তিনি। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা খুঁটিয়ে দেখেছেন। পাশাপাশি ভোপালের ওরিয়া বস্তি অঞ্চলে স্থাপন করেছিলেন একটি প্রাইমারি স্কুল। ২০০৮ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ দিয়ে সম্মানিত করে। 

........................

#Dominique Lapierre #City of Joy #silly পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

83

Unique Visitors

181876