গল্প

লকডাউন রিভিজিটেড

অমল গোমস Aug 16, 2020 at 3:55 am গল্প

-হ্যালো ছোটু...ছোটু...হ্যালো!
-গুরু! অনেকদিন বাদে...কেমন আছ?
-নাঙের পিরিত মারাস পরে। এখন কোথায় তুই ?
-এই তো, ক্লাবে ...
-...সোগোমারানি! একদিন আড্ডা না দিলে বাড়ীতে চাল ফোটেনা ? করোনায় যখন পোঁদের কাপড় ধরে টানবে তখন বুঝবি। যাক গে, বাইরে আয়। সবার সামনে হাউ হাউ করিস না...
-তুমি মাইরি একটুও বদলালে না। জটাদা বস্তিতে কাল রিলিফ দেবে। সেগুলোই প্যাকেট করছিলাম। বাইরে এসেছি। বলো!
-ক’দিনের জন্যে একটা শেল্টার দিতে পারবি ? ক্যাচাল বাঁধিয়ে ফেলেছি বাঁড়া।
-শেল্টার... আমি ! তুমি ঠিক আছো তো গুরু ? কি সব বকছ! আউট মনে হচ্ছে ! আমি ছোটু গুরু! ছোটু। প্রমোদদা নয়। পেটো চাও,ঠিক আছে। শেল্টার? আস্ত পাঁইট মারলে নাকি ? পেলে কোথায়?
-আব্বে! আমায় আউট দেওয়ার মত আম্পায়ারের এখনও জন্ম হয়নি। তুই ব্যবস্থা করতে পারবি কিনা বল। বাওয়ালটা প্রমোদদার ওখানেই হয়েছে।
-ক...কী? দাঁড়াও! দাঁড়াও! পুরো বনবনিয়ে গেলাম। আর সময় পেলে না? একেই ট্রেন-বাস বন্ধ! ধান্দায় মন্দা। ব্লেডগুলো পড়ে পড়ে জং ধরে গেলো! এর মধ্যে যার থেকে একটু আধটু হেল্প পাওয়া যেত, তুমি তাকেই চাঁদ দেখিয়ে এলে?
-হেল্প? বাল দিয়েও পুছবে না। পাড়ার লোকে গাঁড় মারাচ্ছে আর উনি সমাজসেবা দেখিয়ে বেড়াচ্ছে।শালা! লকডাউনের আগে কেজি কেজি চাল, আটা-ময়দা গুদোমে ভরে রেখে এখন মামুদের ছাপা মারার খবরে বিচি শুকিয়ে আমসি! সমাজ সেবার ভাঁওতায় গোডাউন খালি করছে।
-কেসটা কি ...
-আরে পাড়ার লাফড়া। রতুর মেয়ের জন্যে বেবিফুড চাইতে গেছিলাম। দিলো না। অথচ আমার সামনেই টিন টিন সাজিয়ে রাখা। বললাম, এখন ওগুলোর থেকেই একটা দাও প্রমোদ দা। শান্তির ছেলে বলে কিনা, এখান থেকে দিতে পারব না রে, এগুলো কামারমাঠে যাবে। তুই রতুকে পাঠিয়ে দিস। ওখানেই দেব। শালা, মা-মরা মেয়েটাকে একা রেখে রতু সে ধাপধাড়া গোবিন্দপুরে যাবে? মাজাকি?
-তারপর?
-... একটা ব্লেড খরচ।
-করেছ কি?
-মারিনি বে। লকডাউন চিরকাল চলবে না সে আমি ভালো করেই জানি। এ লাইনে থেকে প্রমোদের সঙ্গে বাওয়াল দিয়ে নিজেই নিজেরটা মারাব? ফটকে বেবিফুডের টিন গুছোচ্ছিল, ওর বুকেই আড়াআড়ি দাগটা হয়েছে। ব্যস! বুবলা খ্যাপা কুত্তা হয়ে আছে। ধরতে পারলেই চেঁছে ব্রাশ...
-বুবলা মানে মেশিন বুবলা? ফটকের দাদা? ভালো লোচা করলে মাইরি। লোকের জন্যে করতে গিয়ে নিজের ফুটোয় ড্রিল মেশিন...
- দাঁড়া ! ভাবতে দে। এত দিন আমার সঙ্গে থেকেও তো কিচ্ছু শিখিস নি।
-পায়ে জোর পেলে তবে না দাঁড়াব !
-ধুর বাল! শোন, তোদের বস্তিতে একটা খিটকেল হেঁপো বুড়ি থাকে না? কালীমন্দিরে চাতালে বসে ভিক্ষে করে যেটা ?
-জগার মা?
-আমি কি জানি সে বাঞ্চোত জগা না ভগা? তুই একবার কথায় কথায় বলেছিলি গান্ডুটা মাকে একা রেখে মালিপাড়ায় ঘর নিয়ে চলে গেছে। এখন ভিক্ষে করে খায়।
-তো ?
-আর একবার বকলে বাঁড়া...
-হুঁ...
-ভালো করে শোন, আজ রাতের মধ্যেই পুরনো চটের বস্তা জোগাড় করে বুড়ির ঘরের দরজায় টোকা দিবি। দরজা খুলে বুড়ি এগিয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গে বস্তার মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে কিচ্ছুক্ষণ রাখলেই...
-...ধুলোয় চোটে বুড়ি কাশতে শুরু করবে।
-আর হাঁপের টান আছেই। দৌড়ে বস্তিতে গিয়ে ...
-... বুড়ির কাশির খবরটা সবাইকে দেব।
-বাকি কাজ তোদের বস্তির লোকেরাই করবে। আবোদাগুলো কাশি দেখেই ভাববে করোনা। হুড়োহুড়ি করে তাড়িয়ে বুড়িকে হাসপাতালে পাঠাবে, বা পুলিশকে খবর দিলে তারা বুড়িকে সেন্টারে চালান দেবে। চোদ্দ দিন ঝুপড়ি ফাঁকা...
-...শেল্টার রেডি। উফ! তুমি ওস্তাদ লোক। কিন্তু বস্তি সিল করে দিলে সিভিকের চক্করে ঢুকতে না পারলে ?
-ধুর বাল, ঝুপড়িটা এমনিতেও বস্তি থেকে খানিকটা দূরে। বুড়ির টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এলে তবে না সিল হবে। ততদিনে আমি খোলায় জমে যাবো। মামুরা এলে তো আরও ভালো। মামুরা চক্কর কাটলে বুবলার গুষ্ঠির পোঁদে ভয় ঢুকে যাবে। চট করে এদিক মাড়াবে না।
-চামর প্ল্যান। কিন্তু বুড়িটাকেই হুট করে এভাবে...
-দরদের ভাই আমার! চাল ডাল দেওয়ার খবরে লোকে যেভাবে লুঙ্গি তুলে ছোটে, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে হাঁপের টানে বুড়ি এমনিতেই টেঁসে যাবে। তার চেয়ে এতে অন্তত দুবেলা খাবার,ওষুধ জুটবে।
-আর তোমার খাবার ?
-ছোটু, বুড়ির ঝুপড়ি থেকে বস্তিতে কার ঘর সবচেয়ে কাছে রে ?
-কার ঘর বলছি দাঁড়াও...কার ঘর... শেষ ঘরটা তো আমার! চুমু ব্রেন ওস্তাদ। লকডাউন উঠলেই পায়ের ধুলো নিয়ে জিবে ঠেকাব ।
-বালটা!... এতদিন আমার সঙ্গে থেকেও...
-কিচ্ছু শিখিনি। মাইরি! কিচ্ছু শিখিনি।

#গল্প #লকডাউন

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

28

Unique Visitors

213141