ফিচার

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অভিনব মিউজিয়াম

মন্দিরা চৌধুরী July 25, 2020 at 4:08 am ফিচার

জাদুঘর মানেই যেন ইতিহাসের গন্ধ, প্রাচীনের হাতছানি।কিন্তু জাদুঘর যদি হয় এমন, যেখানে ঘরের দেওয়াল, আসবাব, অন্দরসজ্জা সর্বত্রই শুধু টাকা?

আজ্ঞে। ঠিক এমনই একটি জাদুঘর রয়েছে খোদ শহর কলকাতায়। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নতুন প্রদর্শশালা 'দি আর বি আই মিউজিয়াম'। এই জাদুঘরের উদ্দেশ্য অন্যান্য জাদুঘরের চেয়ে খানিক আলাদা, শুধুই অতীতকে দেখানো নয়, পাশাপাশি সম্ভাব্য ভবিষ্যতকেও উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে।

কলকাতার বিবাদী বাগ অঞ্চলে, ৮ নম্বর কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটে রয়েছে এই মিউজিয়াম। ১৯৩৪সালে এই বাড়িতেই প্রথম সূচনা হয় ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের, বেশ কিছুদিন পরে যা তৎকালীন বম্বে শহরে স্থানান্তরিত হয়। এই জাদুঘরকে সাজানো হয়েছে প্রাচীনকাল থেকে এখনও পর্যন্ত ব্যবহৃত বিভিন্ন বিনিময় মাধ্যম দিয়ে। জাদুঘরে ঢুকেই প্রথম ঘরটির একদিকের দেওয়ালে ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে কারেন্সি নোটের জন্ম থেকে বিলুপ্তি পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপ। অপর দিকের দেওয়াল সাজানো হয়েছে বাতিল বা পুরনো নষ্ট হয়ে যাওয়া নোটের মণ্ড দিয়ে বানানো বিভিন্ন জিনিস, বাতিল মুদ্রা দিয়ে বানানো ভাস্কর্য দিয়ে। মূল প্রদর্শশালায় দেখানো হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্পর্কিত তথ্যচিত্র এবং বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত পোস্টার ও স্থিরচিত্র।

সভ্যতার শুরুর দিকে প্রথম বিনিময় মাধ্যম ছিল শস্য। এই বিনিময় মাধ্যম বিবর্তিত হতে হতে কড়ি, মুদ্রা, টাকা প্রভৃতি রূপ পেরিয়ে ভবিষ্যতের শূন্য মাধ্যমের বিনিময় ব্যবস্থা পর্যন্ত ধাপে ধাপে তথ্যচিত্র, ছবি, লেখার মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে এই প্রদর্শশালায়। পাশাপাশি বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্যও পাওয়া যায়; যেমন, প্রাচীনকালে আর্থিক বিনিময়ের একটা যথেষ্ট প্রচলিত মাধ্যম ছিল লবণ। আবার, প্রশান্ত মহাসাগরের ইয়াপ দ্বীপপুঞ্জে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হত ডোনাট আকৃতির পাথর। বিভিন্ন রকমের ভল্টের মডেলও প্রদর্শিত হয়েছে এই মিউজিয়ামে। প্রদর্শশালার দোতলায় রয়েছে শিশু-কিশোরদের মনোরঞ্জনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। ক্যারাম, লুডো, বায়োস্কোপের বাক্স ইত্যাদিকে অর্থনীতির বিভিন্ন প্রকল্পের আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। শিশুদের বোধগম্যতার দিকে খেয়াল রেখে ব্যবসা,ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশদ তথ্যও আছে এখানে।

বহু বছর আগে ভারত সরকারের বিভিন্ন বন্ড ছাপা হত পিডিও প্রেস থেকে, হাতে চালানো সেই ছাপাখানা এখনও সচল অবস্থায় আছে এই জাদুঘরে। এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টি হল, এই প্রদর্শশালার দর্শক হওয়ার প্রমাণস্বরূপ দর্শকের নাম ছাপা একটা শংসাপত্র পাওয়া যেতে পারে এলহান থেকে, যেটা ছাপা হবে ওই পুরনো মুদ্রণযন্ত্রে। এর পাশাপাশি এখানে কিনতে পাওয়া যায় বাতিল টাকার মণ্ড দিয়ে বানানো চাবির রিং, ফাইলের মতো বিভিন্ন উপহারদ্রব্য ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র। সাধারণ অবস্থায় এই জাদুঘর দর্শকের জন্য খোলা থাকে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে রবিবার পর্যন্ত সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা অবধি। বন্দিদশা কাটলে একবার কিন্তু ঘুরে আসাই যায় এই মিউজিয়াম থেকে।

#রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া #Reserve Bank of India #মিউজিয়াম #মন্দিরা চৌধুরী

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

35

Unique Visitors

217850